Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মাটির নিচের পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে

মাটির নিচের পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে
মৃত্যুঞ্জয় রায়
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী বায়ুম-লের উষ্ণতা বাড়ছে, বনে দাবানল লাগছে, বৃষ্টিপাত কমছে, মাটির আর্দ্রতা কমছে। আর এসব কারণে এ শতকেই বিশ্বে চরম খরা ও মরুকরণের আশংকা করছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ খরার ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০২০ সাল থেকে ২১০০ সালের মধ্যে বায়ুম-লের তাপমাত্রা বর্তমানের চেয়ে ১.৫-২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলে তার প্রভাবে শুধু উত্তরবঙ্গ না, আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের দক্ষিণ ও মধ্য পূর্বাঞ্চলেও খরা ছড়িয়ে পড়বে। খরার পেছনে মূল কারণ জলের স্বল্পতা বা জলশূন্যতা। বিবিএস-এর হিসেবে খরায় এ দেশে বছরে প্রায় ৭ লাখ টন ফসল নষ্ট হয়।
সতের কোটির বেশি লোকের এ দেশে দৈনন্দিন কাজ ও পানের জন্য রোজ বিপুল পরিমাণ জলের দরকার হচ্ছে। পানি লাগছে শিল্প-কলকারখানায়। এর সাথে আছে চাষাবাদের জন্য সেচের পানি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুধু বৃষ্টিপাতের ওপর ভরসা করে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। তাই কোনো কৃষক ফসল চাষে ঝুঁকি না নিয়ে সেচের ওপর নির্ভরতা বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেচের পানি আসে দু জায়গা থেকে- মাটির উপরের পানি ও মাটির নিচের পানি। মাটির উপরের পানি হলো নদী-নালা, খাল-বিল। দিন দিন পানির এসব উৎস কমে আসছে। ফলে চাপ বাড়ছে মাটির নিচের পানির ওপর। কৃষিকাজে এখন বিপুল পরিমাণ মাটির নিচের পানি ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্যাপক নগরায়নের ফলে সুপেয় জলের ব্যবস্থা করতে নগরকর্তারাও মাটির নিচ থেকে পানি তুলছেন। বিদেশে নগরে ব্যবহৃত পানি শোধন বা রিসাইক্লিং করে পুনরায় ব্যবহারের যোগ্য করে তোলেন, মাটির নিচে সঞ্চিত পানিভা-ারকে যতটা সম্ভব মজুদ রাখেন। সংকটকালীন সময় ছাড়া সেই মজুদকৃত পানিতে কেউ হাত বাড়াতে চান না। কিন্তু আমাদের দেশে বিষয়টা একবারে উল্টো। আমরা মাটির উপরের চেয়ে মাটির নিচের পানি তুলতেই বেশি আগ্রহী। দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ আবাদি জমি এখন সেচের আওতায়। ছোট্ট একটা দেশে সেচযন্ত্র আছে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ।
আমাদের মনে থাকে না যে, মাটির নিচের কোনো সাগর বা পদ্মা-মেঘনার মতো নদী নেই। মাটির নিচে পানি থাকে মাটিকণার ফাঁকে  ফাঁকে। মাটির গঠনটা বেশ অদ্ভুত। আমরা যাকে মাটি বলি, তা বহু শিলা বা নুড়ির ক্ষয়ে যাওয়া কণা। এসব কণার ফাঁকে থাকে পানি অথবা বায়ু। সাধারণত কোনো মাটির ভেতরে এসব কণার মধ্যে ফাঁকা থাকে অর্ধেক অংশ। এ অর্ধেকের আবার অর্ধেক অর্থাৎ সিকি ভাগ থাকে পানি ও সিকি ভাগ থাকে বায়ু একটা কমলে অন্যটা বাড়ে। নদ-নদী বা অন্যান্য জলাশয়ে যে পানি থাকে এবং বৃষ্টিপাতের ফলে যে পানি হয় তা চুইয়ে মাটি কণার ফাঁক দিয়ে নিচে গিয়ে জমা হয়, মাটির গভীরে খালি হয়ে যাওয়া জায়গায় পানির পুনর্ভরণ হয়। সেসব পানিই আমরা যন্ত্র দিয়ে মাটির নিচ থেকে তুলে আনি। এক্ষেত্রে নানা ধরনের নলকূপ ব্যবহার করে মাটির বিভিন্ন স্তর থেকে বা বিভিন্ন গভীরতা থেকে পানি তুলে আনা হয় উপরে।
বর্তমানে পানির ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে গেছে। মাটির নিচ থেকে অতিরিক্ত পানি তোলার কারণে সেখানে সঞ্চিত পানি কমে যাচ্ছে, পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে চাষের মৌসুমে সেচের সংকট দেখা দিচ্ছে। সাময়িক খরা পরিস্থিতিতে পড়ে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া অতিরিক্ত পানি তোলার কারণে তার সাথে মাটির নিচ থেকে উঠে আসছে সীসা ও আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতব কণা যা আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই, জলবায়ু বদলে যাওয়ার কারণে এ দেশের পানি পরিস্থিতির ওপরও সংকট নেমে এসেছে। বিশ্বব্যাপী এখন আগের চেয়ে বেশি খরা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে খরা বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি ও নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জাতীয় খরা সম্মেলন ২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে বাংলাদেশের খরা পরিস্থিতি, প্রভাব, করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে সেখানে অনেক আলোচনা করা হয়েছে। সম্মেলন শেষে আলোচকরা সুপারিশ করেছেন, ‘এ দেশের কৃষিকে রক্ষা করতে হলে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কৃষিকাজে ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহার করতে হবে। তৃণমূল মানুষদের সমস্যার কথা শুনতে হবে। কৃষককে বাঁচাতে নীতি গ্রহণ করতে হবে। খরা মোকাবিলায় বন্যাকবলিত এলাকার পানিকে খরাপ্রবণ এলাকায় স্থানান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’ এই সম্মেলন নিঃসন্দেহে এ সময়ের জন্য খুবই দরকার। সুপারিশগুলো পর্যালোচনা ও বিবেচনার দাবি রাখে।
দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ইতোমধ্যে উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলোকেও আমলে নিতে হবে। খরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সেচ সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে কিভাবে ফসল উৎপাদন অব্যাহত রাখা যায় তা দেখতে হবে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ধানের কিছু খরা সহনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট তাপসহনশীল জাতের গম উদ্ভাবন করেছে। আমাদের দেশে খরা সইতে পারে অতীতে এমন বেশ কিছু দেশী ধানের জাত ছিল। উচ্চফলনশীল আধুনিক ও হাইব্রিড জাত আসায় সেগুলো হারিয়ে গেছে বা যাচ্ছে। সেসব জাতের বৈশিষ্ট্য নিয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা বায়োটেকনোলজি কৌশল গ্রহণ করে ফসলের খরা সহনশীলতা বাড়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। খরা পরিস্থিতি যেভাবে বাড়ছে সেজন্য আরও অনেক ফসলের খরা ও তাপ সহনশীল জাত উদ্ভাবন করা দরকার। পাশাপাশি খরা পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানোর ও সেচ সাশ্রয়ী আরও চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা দরকার। ভূগর্ভস্থ পানির চেয়ে কৃষি ও দৈনন্দিন কাজে ভূপৃষ্ঠস্থ পানি ব্যবহারে জোর দিতে হবে। এ দেশে বোরো ধানে সবচেয়ে বেশি মাটির নিচের পানি সেচ দেওয়ার জন্য তোলা হয়। ধানের চেয়ে শাকসবজি ও ফল চাষে সেচ কম লাগে। তাই রবি মৌসুমে যেসব জমিতে ধানের বদলে শাকসবজি চাষ করা যায় সেসব জমিতে তা করতে হবে। ধানের ঘাটতি হলে আউশ মৌসুমে আরও উচ্চফলনশীল জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে এবং চাষ এলাকা সম্প্রসারণ করে সে ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও পদক্ষেপ নিতে হবে।  
যেসব এলাকায় নিয়মিতভাবে একটি বিশেষ সময়ে খরা দেখা দেয় ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেসব এলাকায় কম পানি লাগে বা স্বল্প পানিতে চাষ করা যায় এরূপ ফসলের চাষ করতে হবে। মাটি থেকে পানি যাতে দ্রুত না শুকিয়ে যায় সেজন্য ফসলের খেতে বেড তৈরি করে তা মালচিং ফ্লিম দিয়ে ঢেকে চাষ করতে হবে। মাদায় হয় এমন ফসল যেমন মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, খিরা, বাঙ্গি এমনকি ফলগাছ লাগিয়ে তার মাদা বা গোড়া কচুরিপানা বা খড় দিয়ে ঢেকে রাখলে সেখানকার মাটি থেকে পানি কম শুকাবে, এতে সেচও কম লাগবে। খরাপ্রবণ এলাকায় সমাজভিত্তিকভাবে পাশাপাশি জমি রয়েছে এমন কয়েকজন কৃষক মিলে তাদের মোট জমির ৫ থেকে ১০ শতাংশ পরিমাণ জমিতে মিনিপুকুর খুঁড়ে সেখানে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি বা বন্যার পানি আটকে রেখে খরার মৌসুমে সেসব মজুদ পানি পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করে ফসল ফলানো, তাতে খরার ঝুঁকি কমে। এমনকি আউশ ধান চাষে সম্পূরক সেচের দরকার হলে তাও এ পানি দিয়ে মেটানো যায়। আধুনিক ড্রিপ বা ফোঁটা সেচ পদ্ধতিতেও ফসলে সেচ দিয়ে অনেক কম পানি ব্যবহার করে ভালোভাবে ফসল উৎপাদন করা যায়।  
মাচায় হয় এমন লতানো সবজি জমিতে লাগিয়ে যদি মাচায় তুলে জমিকে তার লতাপাতা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় তাহলে সেসব জমির মাটি সূর্যের তাপে কম শুকাবে। এতে সেচ কম দিলেও চলবে। শুধু গাছের গোড়ায় পানি ঢাললেই তাতে ফসল ভালো হবে, সমস্ত জমি ভাসিয়ে সেচ দেয়ার দরকার হবে না। এতে বিপুল পরিমাণ পানি সাশ্রয় হবে। তাছাড়া আমরা সেচের জন্য ধান ও সবজি খেতে যেসব  প্রচলিত পদ্ধতি ব্যবহার করে সেচ দিচ্ছি, তাতে প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ সেচের পানি অপচয় হচ্ছে। এত দামের পানির এভাবে নষ্ট হওয়া কোনভাবেই কাম্য না। ভূগর্ভস্থ নালা, পাকা সেচনালা, ফিতাপাইপ ইত্যাদি ব্যবহার করে সেচ দিলে সেচের পানির অপচয় অনেক কমে। সেচের পানির সাশ্রয় মানে মাটির তলার পানির মজুদ ভালো থাকা ও সেচযন্ত্র চালাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমে যাওয়া।
মোদ্দা কথা হলো মাটির নিচের পানি ব্যবহারে এখন অনেক বেশি মিতব্যয়ী হতে হবে, জোর দিতে হবে মাটির উপরে থাকা পানি বেশি ব্যবহারের ওপর এবং মাটির উপরে জলাশয় খনন, নদী বা খালে রাবার ড্যাম তৈরি, নদী ও খাল সংস্কার, রাস্তার দুধারে নালা থাকলে তার গভীরতা বাড়িয়ে পানি মজুদ করে রাখা ও খরার সময় তা ব্যবহার করা। এসব কাজ করলে তা জলবায়ু পরিবর্তনকেও কমাবে। এজন্য দরকার ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারকারীদের সচেতনতা এবং বাস্তবসম্মত সঠিক কৌশলপত্র প্রণয়ন ও পরিকল্পনা।   

লেখক : অতিরিক্ত পরিচালক (অব:), ডিএই; কৃষি বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ বন্ধু ফাউন্ডেশন ও সিন্ডিকেট সদস্য, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মোবাইল : ০১৭১৮২০৯১০৭ ই-মেইল : kbdmrityum@yahoo.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon